বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:তমলুকের পর হলদিয়া। পূর্ব মেদিনীপুরে শুভেন্দু অধিকারী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কি তা হলে পুরোমাত্রায় দ্বন্দ্ব তৈরি হয়ে গেল? আপাতত এই প্রশ্ন ঘিরেই জল্পনা ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে পশ্চিমবাংলায়।কিছুদিন আগে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহরের রাস্তায় রাস্তায় আচমকাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসংখ্য পোস্টার দেখা গিয়েছিল। তার পরই সেখানে পড়তে শুরু করে শুভেন্দু অধিকারীরও পোস্টার। ওই ঘটনায় জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে।
রাজ্য রাজনীতিতে দু’জনেই শাসক দলের হেভিওয়েট নেতা। তাই দুই নেতার দু’রকম পোস্টার জেলার সাধারণ মানুষের মনে কম কৌতূহল তৈরি করেনি। তমলুকে দেখা গিয়েছিল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টারের আগে ও পরে ঝুলছে শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টার। দুই নেতার পোস্টারেও রয়েছে বেশ কিছু পার্থক্য। যেমন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টারে তাঁকে তৃণমূলের সৈনিক হিসেবে লেখা হয়েছে। অথচ শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টারে তাঁর পরিচয় হিসেবে দেওয়া হয়েছে ‘সমাজসেবী’ কথাটি। বলা বাহুল্য, এই বৈপরীত্যও জেলার পাশাপাশি রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি করেছিল।
এবার হলদিয়াতেও দানা বেঁধে উঠেছে পোস্টার–রহস্য। কয়েকদিন ধরেই সেই একই কায়দায় পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের এই শিল্প শহর। হলদিয়ার বিভিন্ন রাস্তায় এখন শোভা পাচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টার। সূত্রের খবর, পোস্টারগুলি সেখানে লাগানো হয়েছে তৃণমূল যুব সভাপতির পক্ষ থেকে। আরও লক্ষণীয়, ওই পোস্টার লাগানোর একদিনের মধ্যেই হলদিয়া জুড়ে লাগানো হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টারও।
হলদিয়ায় লাগানো এই দুই নেতার পোস্টারেও একই ধারার পার্থক্য রয়েছে। যেমন অভিষেকের পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘আমি যুব যোদ্ধার একজন সৈনিক, নেতা নয়। আমাদের সম্পদ কর্মী।’ অন্যদিকে, শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টারে বিবেকানন্দের বাণী লেখা হয়েছে। ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেইজন সেবিছে ইশ্বর’। পোস্টারের নীচে লেখা রয়েছে ‘আমরা দাদার সৈনিক’।
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কে শীতলতা নিয়ে সংবাদের শিরোনামে চলে আসেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তখনই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়ে যায়। সেই চর্চা আরও বেড়ে যায় হঠাৎই পূর্ব মেদিনীপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি ঘিরে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, যুব শক্তির হাত ধরে সুপরিকল্পিত ভাবেই শুভেন্দু গড়ে ধীরে ধীরে প্রভাব বাড়িয়ে চলেছেন অভিষেক।
এর পেছনে কারণ হিসেবে রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের অনুমান, শুভেন্দু অধিকারীর ওপর নির্ভর করেই বামেদের হাত থেকে দুই মেদিনীপুর কেড়ে নিয়েছিল তৃণমূল। এখন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের। অনেকের ধারণা, ধীরে ধীরে বিজেপির দিকে পা বাড়াচ্ছেন শুভেন্দু। তাই দুই মেদিনীপুরে নিজেদের প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্রিয় হয়েছেন তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক নিজেই। সেই কারণে তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় কর্মীদের সঙ্ঘবদ্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছেন।
অন্যদিকে, শুভেন্দুও দুই মেদিনীপুরে নিজের জমি সহজে ছাড়তে চাইছেন না। তাই অভিষেককে রুখতে পাল্টা মাঠে নেমে পড়েছেন তিনিও। ফলে তৃণমূলের অভ্যন্তরে দুই প্রভাবশালী নেতার ঠান্ডা লড়াই ক্রমে জোরালো হয়ে উঠছে। এই লড়াই ভবিষ্যতে কী চেহারা নেয়, আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা।